শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১

দোহায় তোমাদের, এবার থাম


আবু বকর সিদ্দীক
স্বাধীনতার প্রথম সুর্যদয় এবং সাংস্কৃতিক রাজধানীর গৌরবময় কুষ্টিয়া জুড়ে নানা কলংক। নিষিদ্ধ চরমপনি'দের নৃশংসতা না থামতেই শুরম্ন হয় রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন। প্রতিশ্রম্নতি ভেসে বেড়ায়, উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে। আওয়ামীলীগ-বিএনপির নেতাদের দামি দামি গাড়ি হয়, বাড়ি হয়। সুন্দরী রড়্গিতা জোটে। হয় না কুষ্টিয়ার উন্নয়ন। এসব বৈষম্য নিয়ে সব সময়ই সরব ছিল এখানকার মিডিয়া। সে কারণেই একটি জেলা শহর থেকে ১৩টি দৈনিক এবং হালিখানেক সাপ্তাহিক নিয়মিত প্রকাশিত হয়। অনিয়মিত আছে আরো কিছু। অপসেটে নিয়মিত এ ব্যয়বহুল প্রকাশনা অব্যাহত রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের ভালোবাসায়।
বিরম্নদ্ধচারণে সংবাদকর্মীদের আজন্ম যুদ্ধ অন্যায়, বৈষম্যের বিরম্নদ্ধে। তীব্র ঘৃণায়, প্রতিবাদের চাঁদরে প্রিয় পত্রিকার পাতা জুড়ে ছড়িয়ে দেয় অপরাধীর সচিত্র প্রতিবেদন। ড়্গমতা কেন্দ্রীক রাজনীতিবিদ এবং সুবিধাভোগি প্রশাসনের কর্তাদের মুখোশ খুলে যায়। তিন টাকার সাধারণ মানের একটি নিউজপ্রিন্ট কাগজ ভিত নড়িয়ে দেয় কোটি টাকার মালিকের। তাদের মদদে দড়্গিণ-পশ্চিমাঞ্চল কাঁপানো বাঘা বাঘা সন্ত্রাসীরা সংবাদের ভয়ে গর্তে লুকায়। একে ফোরটি সেভেনসহ ভারি ভারি অস্ত্র তিন টাকার কলমের কাছে অর্থহীন।
আপসহীন সাংবাদিকতার উর্বর ভ'মি হিসাবে কুষ্টিয়া স্বীকৃত। দাবি আদায়ের মাধ্যম হিসাবে এখান মানুষ পত্রিকাকে শ্রেষ্ঠ পস্নাটফর্ম মনে করে। জাগতিক লোভ লালসা ও ভয় থেকে বিচ্যুত থেকে সংবাদকর্মীরা কাজ করে। রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের রোষানলে তারা পড়েছে বারবার। মামলা হামলা এমনকি নানা বদনাম মাথায় নিতে হয়েছে তাদের। কুষ্টিয়াসহ সারা দেশের মানুষ জানে, এখানকার পেশাদার সংবাদকর্মীদের কিভাবে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
শুরম্ন থেকেই সাংবাদিকদের মধ্যে কম বেশি বিভাজন এখানে ছিল। তবে পূর্বে তা ছিল শালিনতার মধ্যে। নিজেদের মতাদর্শ বা ভাবনাকেন্দ্রীক জায়গা থেকে অমিল ছিল, সংঘাত ছিল না। নোংরামী ছিল না। কোন সংবাদকর্মীকে নিয়ে যাচ্ছেতাই লেখালেখি করা হয় নি।
এবার কুষ্টিয়ার দৃশ্য পাল্টে গেছে। রাজনীতিবিদ এবং প্রশাসন নিজেদের সুবিধার জন্য ভর করেছে সংবাদকর্মীদের উপর। কিছু লোভি সংবাদকর্মী সাময়িক লাভের আশায় ঝুঁকে পড়েছে। অন্যরাও সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের অপরাধ বিষয়ক সংবাদ পরিবেশন বাদ। সংবাদকমীরা আদর্শকে নদীতে ভাসিয়ে শোষক ও অত্যাচারীকে দেবতার আসনে বসিয়েছে। ঘেউ ঘেউ শব্দে বিরক্ত হয়ে চেয়ার ও ড়্গমতার দেবতারা মাঝে মধ্যে উচ্ছিষ্ট ফেলে দেয় মুখের সামনে। তাতেই বেজাই খুশি বাধ্য কলমযোদ্ধারা।
রাষ্ট্রের চতুর্থ সত্মম্ভের অহংবোধ বুকে নিয় পথ চলে সাংবাদিকরা। তথ্য নেয়ার ড়্গেত্রে প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের সাথে সখ্যতা গড়ার সুযোগ আছে। তাদের প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দেবার সুযোগ নেই। অভ্যানত্মরিণ কোন ভুল বোঝাবুঝির জন্য তাদেরকে ব্যবহার করা হওয়া কোনটাই যুক্তিসঙ্গত নয়।
কতটা দেওলিয়া হলে সংবাদকর্মীদের জন্য শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন, থানায় বসে সমাস্যা সমাধানের উপায় খোঁজে তা বলার অপেড়্গা রাখে না। সেখানে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ে হাতাহাতিতে। রাষ্ট্রের অস্ত্রধারী স্বীকৃত নিরাপত্তা প্রহরি পুলিশ অফিসার চেয়ারে পা তুলে দিয়ে সে দৃশ্য দেখে। জাতির বিবেক জড়িয়ে পড়েছে মারামারিতে। বহুবার এদের কারণে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান যেতে হয়েছে। ঘুষ নিয়ে তা ফেরত দেবার রেকর্ডও রয়েছে। চাকরী বাঁচাতে বাধ্য হয়ে নতজানু হয়ে মাফ চাইতে হয়েছে। সেই দুঃসাহসিক সংবাদকর্মীদের কয়েকজন নিজেদের কাপড় ছিড়ছে। সোলস্নাসে ফেটে পড়ছে পুলিশ। রাজনীতির শীর্ষকর্তার মোবাইলে জানিয়ে দিচ্ছে সুখবরটি। উভয়ের মধ্যে হাসাহাসি। থানার মধ্যেই সংঘর্ষে লিপ্ত ইতিহাস ঐতিহ্যের তীর্থভ'মি কুষ্টিয়ার সংবাদকর্মীরা।
মামলা হয়েছে। আসামী সংবাদকর্মী। এবার তদনেত্মর চেয়ারে পুলিশ। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার প্রতিবাদী কণ্ঠে এখন  নিজেকে বাঁচানোর মিনতি। ভয়ে জড়োসড়ো থাকা পুলিশ কর্তাকে গোপনে ডেকে তোষামোদি। নগদও দিতে হচ্ছে। সাথে কোনদিন বিরম্নদ্ধে না লেখার প্রতিশ্রতিসহ নানা আকুতি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা পেতে ড়্গমতাধর নেতার ড্রয়িংরম্নমে যাচ্ছে ঘনঘন। লজ্জায়, অপমানে দুমড়ে, মুচড়ে যাচ্ছে পত্রিকা।
অসাধূ, সুবিধাভোগি ছাড়া এমন দৃশ্য কারও কাম্য নয়। সচেতন কুষ্টিয়াবাসি সাংবাদিকদের কামড়া কামড়িকে ভালো চোখে দেখছে না। ভিতরের চক্রানত্ম তারা জানে না। মাঠের দৃশ্য দেখে সহজেই তারা বুঝছে, এটা সাংবাদিকদেরই দ্বন্দ। কলকাঠি কাদের হাতে তা দেখে না গ্যালারির দর্শক। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। এখনই। দোহাই সাংবাদিকদের, এবার থাম।